গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আজ স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।
সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংস হত্যাকান্ডের পর থেকে ছয় বছর নির্বাসিত জীবন অতিবাহিত করে ১৯৮১ সালের এই দিনটিতে দেশে ফেরেন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। আজ থেকে প্রায় ছয় বছর আগে এইদিনটিতে বিকেল সাড়ে চারটায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং বিমানে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লী থেকে কলকাতা হয়ে তৎকালীন বিমানবন্দর ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ ||ছবি-সংগৃহিত |
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও আওয়ামীলীগের অঙ্গসংগঠনগুলো সহ অন্নান্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলো প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ একটি বিবৃতী প্রকাশ করেছেন । রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন:
শেখ হাসিনা দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন শুরু করেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জোট সরকার টানা তিনবার ক্ষমতায় এসে বাংলার মাটিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে এবং সাফল্যের সঙ্গে সরকার পরিচালনা করতে সমর্থ হয়েছে। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং জনকল্যাণমুখী কার্যক্রমে দেশ আজ অনেকদূর এগিয়ে যাচ্ছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যেদিন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল তখন শেখ হাসিনা তার ছোট বোন শেখ রেহানা, স্বামী ও দুই সন্তানসহ তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন। যারফলে তারা প্রাণে বেঁচে যান। পশ্চিম জার্মানি থেকেই স্ত্রী শেখ হাসিনা, শ্যালিকা শেখ রেহানা এবং শিশু পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও শিশু কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নিরাপত্তা এবং প্রাণ রক্ষার জন্য ভারত সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়া। সেই সময়ের এমন কঠিন পরিস্থিতিতে তাদের হাতে পর্যাপ্ত পরিমান টাকাও ছিল না। শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা মাত্র ২৫ ডলার সঙ্গে নিয়ে দেশ থেকে জার্মানি গিয়েছিলেন। ২৪ আগস্ট সকাল ১০ তার দিকে ভারতীয় হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা তাদের ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দরে নিয়ে যান। তবে তাদের যাত্রার বিষয়টি সে সময় গোপন রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।
এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে ২৫ আগস্ট সকালে দিল্লী পৌঁছান শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, ওয়াজেদ মিয়া এবং তাদের দুই সন্তান। বিমানবন্দর থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় নয়া দিল্লীর ডিফেন্স কলোনির একটি বাসায়। ওই বাসায় ছিল একটি ড্রইং-কাম-ডাইনিং রুম এবং দুটো শয়নকক্ষ ও একটি রান্নাঘর। উক্ত বিপদকালীন সময়ে তাঁদের ওই বাড়ির বাইরে না যাওয়া সহ সেখানকার কারো কাছে পরিচয় না দেয়া এবং দিল্লীর কারো সঙ্গে যোগাযোগ না রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল তাদের। ভারতে তখন জরুরী অবস্থা চলছে। ভারতে বাংলাদেশ সম্পর্কে তেমন কোন খবরাখবর ভারতের পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে না। ফলে তখনকার বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অন্ধকারে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে। কোনো রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না তাঁরা। দিল্লীতে পৌঁছানোর দুই সপ্তাহ পর ওয়াজেদ মিয়া এবং শেখ হাসিনা ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বাসায় যান। সেখানেই শেখ হাসিনা ১৫ আগস্ট ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনা জানতে পারেন। শেখ হাসিনাকে ইন্ডিয়া গেটের কাছে পান্ডারা পার্কের ‘সি’ ব্লকে একটি ফ্ল্যাট দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য দুজন নিরাপত্তারক্ষীও দেয়া হয়।
১৯৭৫ সালের ১ অক্টোবর ভারতের পরমাণু শক্তি বিভাগে ওয়াজেদ মিয়াকে ফেলোশিপ দেয়া হয়। ১৯৭৬ সালের ২৪ জুলাই শেখ রেহানার বিয়ে হয় লন্ডন প্রবাসী শফিক সিদ্দিকের সঙ্গে। কিন্তু শেখ হাসিনা এবং তার স্বামী ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি।১৯৭৯ ও ১৯৮০ সালে আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতা বিভিন্ন সময় দিল্লী যান তাদের খোঁজ-খবর নিতে। আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক কাবুল যাওয়ার সময় এবং সেখান থেকে ফেরার সময় তাদের সঙ্গে দেখা করেন।
আওয়ামী লীগ নেতা জিল্লুর রহমান, আব্দুস সামাদ আজাদ, তৎকালীন যুবলীগ নেতা আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দিল্লীতে যান। তাদের সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিতে রাজি করানো। ১৯৮০ সালের ৪ এপ্রিল শেখ হাসিনা নিজের সন্তানদের নিয়ে লন্ডনে যান রেহানার সঙ্গে দেখা করতে। পরের বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি দিল্লীতে থাকা অবস্থায় তিনি খবর পান ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। এর এক সপ্তাহ পরে আওয়ামী লীগের সেই সময়ের শীর্ষ নেতারা দিল্লী যান। আব্দুল মালেক উকিল, ড. কামাল হোসেন, জিল্লুর রহমান, আব্দুল মান্নান, আব্দুস সামাদ, এম কোরবান আলী, বেগম জোহরা তাজউদ্দীন, স্বামী গোলাম আকবার চৌধুরীসহ বেগম সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, বেগম আইভি রহমান, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ ১৯৮১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে দিল্লী পৌঁছান। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কয়েকটি বৈঠক করেন তারা।এরপর ড. কামাল হোসেন ও সাজেদা চৌধুরী ছাড়া সবাই ঢাকায় ফিরে যান। কামাল ও সাজেদার ওপর দায়িত্ব ছিল তারা শেখ হাসিনার ঢাকা ফেরার তারিখ চূড়ান্ত করা। তারা মার্চের দুটো সম্ভাব্য তারিখ প্রস্তাব করলেও তা নিয়ে ওয়াজেদ মিয়ার আপত্তি ছিল। ১৬ মে শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে দিল্লী থেকে একটি ফ্লাইটে কলকাতা পৌঁছান।
১৭ মে বিকালে তারা কলকাতা থেকে ঢাকায় পৌঁছান। তাদের সঙ্গে ছিলেন আব্দুস সামাদ আজাদ ও এম কোরবান আলী। সেদিন প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে লাখো জনতা জড়ো হয়েছিল তেজগাঁওয়ের পুরনো বিমানবন্দরে। প্রত্যাবর্তনের দিন শেখ হাসিনাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানানোর জন্য উপস্থিত লাখ লাখ মানুষের হৃদয় ছোঁয়া ভালবাসার জবাবে তিনি বলেছিলেন, সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই।
সেদিনের সেই শেখহাসিনা আজ উন্নয়নের অগ্রদূত এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
17 may 2019
No comments:
Post a Comment